গল্প নয়

সাদা কাক ( পর্ব্ব ১ )

কাল্পনিক বা সত্যি ঘটনা, যা খুশী ভাবা যেতে পারে কিন্তু কোথাও যেন বাস্তবের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

সাদা কাক

প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে নানানরকম অভিজ্ঞতা হয় আমিও তার ব্যতিক্রম নয়, নিত্যনতুন কিছু না কিছু ঘটনার অভিজ্ঞতা আমার হবেই। কেউ বলে ও সব তুচ্ছ ঘটনা আবার কেউ বলে ঢপ, অবাস্তব, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি কোনও কথা এক বর্ণ বাড়িয়ে বলি না, যা দেখি তাই বলি। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, আসল ঘটনায় আসি।

আমি আজকাল রোজ প্রাতঃভ্রমণে বেরুই। বলতেই পারেন যে এ আর এমন নতুন কথা কি অনেকেই বেরোয়। আমি জানি সেটা কিন্তু আমার বলার উদ্দেশ্য যে আমিও বেরুই এবং আমার বর্তমান অভিজ্ঞতা ওই প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়েই, একটু ধৈর্য্য ধরে যদি শোনেন।

লবণ-হ্রদে আমার বাড়ীর সামনে খুব সুন্দর গাছপালায় অধ্যুষিত বনবিতান বলে একটি জায়গা আছে যেখানে আমি সকালে হাঁটতে যাই। একটু তাড়াতাড়ি বেরুই যাতে রোদ্দুর তেজ হবার আগেই বাড়ী ফিরে আসতে পারি। কিছু কিছু জায়গা আছে একটু বেশী নির্জ্জন যেখান দিয়ে কম লোক হাঁটেন এবং একটু সকাল সকাল বেরুলে ওই জায়গায় কাছে পিঠে কাউকে দেখা যায় না। আমি চেষ্টা করি যে ওই সময়টায় হাঁটতে, খুব ভালো লাগে।

এরকম একদিন ওই নির্জ্জন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, চারিদিক বেশ চুপচাপ শান্ত, হঠাৎ শুনলাম “শালার দল একটু মাখন দিতে পারিস না” চমকে ওঠে দাঁড়িয়ে গেলাম, এদিক ওদিকে কেউ নেই, শুনশান, তাহলে কে বললো? ঠিক শুনলাম তো? এই ভাবতে ভাবতে এক পা এগিয়েছি কি এগোই নি আবার কানে গেলো ” কি রে ঢেঁড়স, কথার জবাব না দিয়ে চলে যাচ্ছিস যে বড়”। বিশ্বাস করুন এ যদি রাত্রিবেলা হত নির্ঘাত Heart Attack হত কিন্তু দিনের বেলা বলে গা ছমছম করলেও সাহস করে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম যে একটা অদ্ভুত ধরণের সাদা কাক বনের দিকের রাস্তাটায় বসে আমায় দেখছে। ওর দিকে চোখ পড়তেই বললো যে ” তোকেই বলছি রে শালা একটু মাখন দিতে পারিস না ” ঘটনার আকস্মিকতায় এত হতভম্ব হয়ে গিয়ছিলাম যে গলা দিয়ে স্বর বেরুচ্ছিলো না, তবুও আমতা আমতা করে বললাম “মানে”। ” মানে কি রে? শালা দিনের পরের দিন শুকনো পাঁউরুটি, বিস্কুট, ম্যায় বাসী রুটি খাইয়ে পেটে চড়া পরিয়ে দিচ্ছিস, মাঝে মাঝে একটু জ্যাম, মাখন লাগিয়ে দিতে পারিস তো, তোরা যেরকম ভাবে খাস, মুখের স্বাদটা একটু বদলাতো।” সকালবেলা বলেই হয়তো ততক্ষণে খানিকটা সাহস সঞ্চয় করে গেছি, আর বলে ফেললাম ” আমি তো এসব আনি না, যারা দেয় তাদের বলুন না আমাকে বলছেন কেন আর গালাগাল ই বা দিচ্ছেন কেনো ? আর আপনার যদি ভালো না লাগে তাহলে খান কেনো, না খেলেই তো পারেন।” এ কথায় কাক বাবাজীবন ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে বললো ” শালা , তোর বাপের বয়সী আমি তুই আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস? তোরা খাবার দিয়ে দিয়ে বদভ্যাস করিয়ে দিলি, আর বসে বসে খাবার পেলে কেউ কি নড়ে বসতে চায়? আর আমি কি খাবো কি খাবো না সেটা তুই বলার কে রে শালা। নিজেরা তো পাথর , বালি, চাকরী, কাটমানি খেয়ে সাফ করে দিচ্ছিস আর আমি একটু মাখন চাওয়াতেই তোর ফেটে গেলো?” এর সাথে শুরু হলো দুনিয়ার যতসব গালাগালি আছে, দুই, তিন চার অক্ষরের সবগুলো দেওয়া।

বন্ধুরা বিশ্বাস করুন সকাল সকাল এরকম ঘটনার আকস্মিকতায় আর অকারণে ভয়ংকর খিস্তী খাওয়াতে মাথা ঝনঝন করছিলো। এই ঘটনা কেউ কি বিশ্বাস করবে? সম্পূর্ণরূপে অবাস্তব বা ঢপ বলে উড়িয়ে দেবে, অথচ এটি ভীষণভাবে বাস্তব সেটি আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে। সম্মোহিতের মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গালাগাল শোনা ছাড়া আর আমার কোনও গতি ছিলো না আর নিশ্চিত বুঝতে পারছিলাম সকালে উঠে ঠাকুরের নাম নেওয়াটা ভুলে যাওয়াই আমার কাল হয়েছে। হঠাৎ কাকটা ” ভাগ শালা মেনীমুখো ঢ্যাঁড়স, তোকে বলে কিচ্ছু হবে না, অন্য লোককে ধরতে হবে” বলে উড়ে চলে গেলো। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও মনে মনে বললাম ” শালা বুড়ো ভাম মাখন চাই। আমি বাড়ীতে পাঁউরুটির সঙ্গে মিনমিন করে মাখন চাইলে মুখ ঝামটা খাই, ক্লোরোস্টল নাকি একটু মাখন খেলেই বেড়ে যাবে, total rationing, আর এই ঘাটের মড়া বুড়ো কাক, তার মাখন লাগবে। হাঁটা আর হলো না নিজের মনেই বিড়বিড় করতে সোজা বাড়ীর পথ ধরলাম।

ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি এবং তার জন্য আমি প্রস্তুত ও ছিলাম না। সব ঘটনাই আমি সবিস্তারে বলবো। যদি কেউ বলেন যে আমি স্বপ্ন দেখেছি তাহলে বুঝতে হবে যে হাঁটতে হাঁটতেও স্বপ্ন দেখা যায় আর হয়তো বা তাই। তবে কেউ যদি বলেন যে এটি আমার কল্পনাপ্রবণ মনের সৃষ্টি তাহলে আমার বলার কিছু নেই।