সাদা কাক ( পর্ব্ব ২ )
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বিছানার পাশে জানলাটা খুলেই মেজাজটা খাপ্পা হয়ে গেলো। মনে হতেই পারে যে সকাল সকাল কি এমন ঘটলো মেজাজ বিগড়ানোর ? ব্যাপারটা একটু খুলেই বলি। দিন কয়েক ধরে সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গলেও নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাঁটতে যেতে পারিনি যেটি আমার রক্তে শর্করা কমানোর জন্য খুবই দরকার। আর হাঁটতে না পারলে শরীরটা ঠিক জুতের থাকে না সেইজন্য আলাদা খচখচানি থাকেই। তো যাই হোক আশা করি আজ কালের মধ্যে আবার নিজের ছন্দে ফিরতে পারবো।
এবার আসল কথায় আসি। সকালে ঘুম ভেঙ্গে জানলাটা খুলেই দেখি আমার জানলার সোজাসুজি আবাসনের পাঁচিলের ওপরে বসে বনবিতানের সেই সাদা কাকটা আমার ঘরের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছে। প্রথমে তো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি, ভুল দেখছি না তো? দু তিনবার চোখ কচলেও দেখলাম যে একেবারেই ভুল নয়, জলজ্যান্ত সেই বজ্জাত বসে আছে। কিছু ভেবে ওঠবার আগেই ব্যাটা বলে উঠলো, ” কি রে শালা এই সময় হল ঘুম ভাঙ্গার, কতক্ষণ ধরে তোর অপেক্ষায় বসে আছি। কয়েকদিন হাঁটতে যাসনি কেনো ? ঢেঁড়স তুই না চিনির রুগী, না হাঁটলে চিনি বেড়ে যাবে জানিস না ? বয়স ই বেড়েছে শুধু, বুদ্ধি বাড়েনি”।
বন্ধুরা আপনারাই বলুন সকাল সকাল বাসীমুখে এইসব কথা শুনলে তো মড়া মানুষ ও দাঁড়িয়ে পড়বে আর আমি তো এক অতি সাধারণ ছা-পোষা মানুষ। চড়াৎ করে মাথায় রক্ত চড়ে গেলো আর স্থান কাল পাত্র ভুলে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম” শুয়োর, ঘাটের মড়া আমি কি করছি না করছি তোর তাতে কি? আর তুই কাকের বাচ্চা আমার ঠিকানাটা পেলি কোথা থেকে? আর কোনও লোক পেলি না, আমার পেছনেই লাগতে হবে?” আমি প্রথমেই আমার ভাষার জন্য পাঠকবর্গের কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি আপনাদের যা ঘটেছে সেটাই বলছি।
আমার এত চীৎকার গালাগালিতে ব্যাটার বিন্দুমাত্র হেলদোল হল না বরঞ্চ শান্ত স্বরে বললো ” দেখ ঢ্যাঁড়োস তোর মাথায় বুদ্ধি কম আমি জানতাম তাই বলে এতো কম? শুয়োর আর কাকের মধ্যে differentiate করতে পারিস না। তোর চেহারা, হাবভাব স্বভাব সবই তো শুয়োরের মত, তাই বলে কি আমি তোকে একবারের জন্যও শুয়োরের বলেছি? এগুলো হচ্ছে dignity, শিক্ষা, তোর তো কিছুই নেই দেখছি। ঠিকঠাক স্কুল কলেজে পাশ করেছিস তো না সেটাও টুকে মেরে কোনও নেতা মন্ত্রীকে ধরে চাকরীতে ঢুকেছিস। তোর মত আতাকেলানে ক্যাবলারা সব পারে।”
আপনারাই বলুন যে একজন অবসরপ্রাপ্ত বরিষ্ঠ নাগরিককে এক ব্যাটা সাদা কাক সকাল সকাল বিনা কারণে যা তা বলে যাবে তাও বাড়ী বয়ে এসে সেটা কাঁহাতক সহ্য করা যায়। আমিও সব শালীনতা ভুলে গিয়ে যা তা ভাবে চীৎকার করে কাকটাকে বলতে লাগলাম আর কাকটা মুচকি হেসে ” খা ঝাড় এবার তোর বৌ এর কাছে” বলে উড়ে চলে গেলো। যেতে যেতে বলে গেলো ” কাল বনবিতানে না গেলে আবার তোর বাড়ীর সামনে এসে হুজ্জুতি করবো, যাবি রে ঢ্যাঁড়স”
আমি রাগে ঠকঠক করে কাঁপছি এমন সময় আমার স্ত্রী ঘরে ঢুকে বললেন যে ” কি হচ্ছেটা কি, এটা তো ভদ্রলোকেদের পাড়া। সকাল সকাল চীৎকার করছো আর মুখের ভাষার কি ছিরি, নর্দ্দমাও হার মানবে। বাবা মা যে কি দেখে বিয়ে দিয়েছিলো, সারাটা জীবন জ্বালিয়ে মারলো।” বলে অন্য ঘরে গিয়ে গজগজ করতেই থাকলো। বিনা কারণে সকাল সকাল case খেলে কার বা ভালো লাগে বলুন। মনে মনে বললাম ” দাঁড়া কাকের বাচ্চা, কাল শরীর যেমনই থাকুক বনবিতানে হাঁটতে গিয়ে এর একটা হেস্তনেস্ত করে আসবো, সুযোগ পেলে তোকে পিটিয়ে মারবো।
Very good writing