জীবন

বাচ্চাটা

আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যেখানে কারুর ভালো করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই তার খারাপ করে ফেলি আর তার জন্য সারাজীবন আফশোষ করতে হয়। এখানে সেরক ই একটি ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

এটা সত্যি নয় তবে সত্যির মত
এটা গল্প নয় তবে গল্পের মত,
এটা কবিতা নয় তবে কবিতার মত
এটি জীবনের ঘটনা এক বাচ্চা ছেলের,
কতই বা বয়স তার সাত আট হবে!
রাস্তার ধারে গ্যারেজে করত সে কাজ,
বিনিময়ে দুবেলা পেত খেতে,
হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর।

অফিস যাবার পথে তাকে রোজ দেখতাম,
বড় বড় চোখে সে নিস্পাপ শিশু,
তাকিয়ে থাকত দেখে বড় মায়া হত।
ছেলেটাও হয়ত বা দেখত আমায়,
থাকত উদাসভাবে, যেন ভাবত কিছু,
সে দৃষ্টির মানে খুঁজে বেড়াতাম।

একদিন গাড়ীটা গেল খারাপ হয়ে,
গাড়ীটা ওই গ্যারেজে নিয়ে এলাম ,
হয়ত বা আমার কোন পিছুটান ছিল
মনে মনে নিশ্চয়ই শান্তি পেলাম
গ্যারেজে গাড়ীর কাজ চলতে থাকল
আমিও প্রাণভরে ছেলেটিকে দেখলাম।
আসার সময় মালিকের চোখ এড়িয়ে
ছেলেটিকে পকেটে পাঁচটা টাকাও দিলাম।
চাইছিল না নিতে টাকা ছেলেটি,
তবুও জোর করে কেন যে দিলাম।
টাকাটা দিয়ে মনে বেশ তৃপ্তি হলেও
একটু মলিন হেসে ছেলেটা গেল চলে ,
আমিও বাড়ীর পথে গাড়ী ঘোরালাম।

মাসখানেক বাড়ী-তে কাটিয়ে ছুটী,
অফিস ফেরতা ওই গ্যারেজে এলাম।
ওই ছেলেটির জায়গায় দেখি অন্য ছেলে,
মালিক বলল ওকে দিয়েছি তাড়িয়ে,
ব্যাটা শয়তান আর চোর ছিল বলে।

যেদিন আপনার গাড়ী এসেছিল,
সেদিন রাত্রে দোকান বন্ধের সময়,
ওর পকেটে পাঁচ টাকার কয়েন পেলাম।
কোথায় পেয়েছিস জানতে চেয়ে
আপাদমস্তক ব্যাটাকে খুব মারলাম।
শালা যত মারি খালি বলে টাকা আপনার দেওয়া
বাবু এরা বেজন্মা ভিখারীর জাত,
চুরি করাটাই এদের স্বভাব।
টাকাটা কেড়ে নিয়ে দিলাম তাড়িয়ে
মরেছে হারামী বোধহয় না খেতে পেয়ে।

ঠিকরে বেরুল বুকের কান্না আমার ,
বজ্রাহত আমি চুপিসাড়ে এলাম পালিয়ে ।
বহুবছর গেল কেটে ওই ঘটনার পরে
ক্লান্তিহীন আমার চোখ আজও খুঁজে মরে
বিনাদোষে শাস্তি পাওয়া ওই মুখটিকে
পাপবোধ, গ্লানিবোধ আমাকে আজও তাড়া করে ফেরে।

এটা সত্যি নয় তবে সত্যির মত
এটা গল্প নয় তবে গল্পের মত
এটা কবিতা নয় , তবে কবিতার মত
এটা জীবনের ঘটনা এক বাচ্চা ছেলের।