বন্ধুর অপূর্ণ জীবন
কিছু কিছু মানুষকে বিধাতা অপূর্ণ করে এই পৃথিবীতে পাঠান। তাঁদের শারীরিক বা মানসিক ভাবে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে যার জন্য তাঁদের একটা পূর্ণ জীবন পরমুখাপেক্ষী হয়ে কাটাতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও তাঁরা সাধারণ জীবন কাটাতে পারেন না। বিধাতার প্রতি এক তীব্র অভিমান ও দুর্ব্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে তাঁরা কালাতিপাত করেন। বিধাতার এই অসম বিচারের উত্তর কেবলমাত্র বিধাতার কাছেই আছে, হয়তো তার কারণ ও কিছু থাকবে যা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা শূধু আমাদের চোখের সামনে এই মানুষগুলির অসহায়তা দেখি। খুব কম মানুষই এঁদের সাথে বন্ধুত্ব পাতান, বরঞ্চ এঁদের এড়িয়ে চলেন। কিছু মানুষ বিনাদোষে এই পৃথিবীর বুকে একটি অপূর্ণ জীবন কাটিয়ে যান।
সারাদিন ধরে
খোলা জানালার রেলিংযের মধ্যে দিয়ে
একটুকরো খোলা পৃথিবী, একটু আকাশ
যাই দেখা যাক না কেন,তাকিয়ে থাকতে, দেখতে
বন্ধুর বড় ভাল লাগে।
এক টুকরো পৃথিবী, এক টুকরো আকাশ
তার বহুদিনের বন্ধু, আত্মার আত্মা,
ছোটবেলা থেকে তার সাথী।
বন্ধুর ভাল লাগা, খারাপ লাগা, যন্ত্রনা
সবসময়ের সঙ্গী এরা, তার জীবনীশক্তি।
তাইতো রোজ সকালবেলা, ঘুম থেকে উঠে
এদের সাথে কথা বলেই দিন শুরু করে সে।
জানলার সামনে ওই দেবদারু গাছটা
এখন বিরাট বড় হলে কি হবে,
ওতো বন্ধুর সাথে সাথেই বড় হয়েছে।
পাশের বড় হলুদ ফুলের গাছটা
যেটা সারা বছর হলুদ ফুলে ভরা থাকে,
সেটাকেও তো একেবারে ছোট্ট চারাগাছ থেকে দেখেছে।
এখানকার যত সব পুরানো বাড়ী আছে
ওরা সবাই বন্ধুকে ভীষণভাবে চেনে,
নতুন বাড়ীগুলোও হয়ত বা মুখ চেনে
তবে সেরকম আলাপ হয়ে ওঠেনি।
তোমরা হয়ত ভাবছ যে
এসব কথা বড় চেনা, বড় জোলো
বন্ধুর এত কথা বলছিই বা কেনো?
আসলে তার জগৎটাই যে ভীষণ আলাদা
সে তোমাদের জানার ও কথা নয়।
যে লোকটা জন্মাবধি চলৎশক্তিহীন হয়ে
দিনরাত ঘরের মধ্যে বন্দী থাকে,
যার পৃথিবী বলতে খোলা জানালা দিয়ে
যতটুকু দেখা যায় ততটুকু,
তার বেদনা বোঝা বড় দুস্কর
সে তো সমাঝের বুকে বোঝা, ব্রাত্য
তার জন্য ভাবার কারই বা সময় আছে বল?
তাই এই খোলা জানালা দিয়ে সে তার
ছোট্ট পৃথিবীটাকে দেখে, তাদের সাথে
কথা বলে, বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করে
গাছপালা, চেনা বাড়ী্-ঘর, পাখী , কাঠবিড়ালী
এদের নিয়েই তার সারাদিন কাটে,
তারাও বন্ধুকে ভীষণ আপন করে নিয়েছে।
মাঝে মধ্যেই তার মনে হয় যে সে ও যদি
সবার মত সাধারণ হতে পারত
সবার মত দৌড়ঝাঁপ করে দিন কাটত
জীবন তাহলে অন্য খাতে বইতো
কষ্ট তার আগে খুবই হত
কিন্তু এখন মনটা বুঝে গিয়েছে,
বোঝার চেয়েও দুঃখটা সয়ে গিয়েছে।
একটাই প্রার্থনা বন্ধুর ভগবানের কাছে,
আগামী জন্মে তাকে পাখী, বনের পশু ,মানুষ
যা ইচ্ছা তাই কর, কোনও দাবী নেই,
খালি তাকে পূর্ণরূপ দিও
দিও সাধারণ ভাবে বাঁচার অধিকার
তাতে যদি বন্ধু শুধু একদিনের জন্য বাঁচে
সে জীবন ও বেঁচে নিতে রাজী।