প্রকৃতি

মিল

আমাদের পাঁচতলার ব্যালকনী থেকে
গাছটাকে খুব ভাল দেখা যায়।
গাছটার নাম জানিনা, তবে ওর ডালপালা
পাতা,ফুল,ফল, খুব ভাল করে চিনি।
আর চিনবই না কেন?
ও তো আমার শৈশবের সাথী।
শিশু আমি যখন এই ফ্ল্যাটে এলাম,
তখন তো ওরও শৈশব,
একটা ছোট্ট চারাগাছ মাত্র।

আমার সাথে সাথেই পাল্লা দিয়ে
গাছটারও বয়স বেড়েছে।
ওকেও বোধহয় আমারই মতন
ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে,
অনেক পথ পার হতে হয়েছে।
আমি যেমন শৈশব, যৌবন পার হয়ে
প্রৌঢ়ত্বের দ্বারপ্রান্তে,
সেদিনকার সেই শিশু চারাগাছও
আজ বিশাল মহীরুহ।
গাছটার সাথে আমার আত্মিক যোগাযোগ
প্রাণের বন্ধন।

কিছুদিন আগে দেখলাম দুটো নীলরং এর পাখী
গাছটাতে বাসা বেঁধেছে।
যেমন সুন্দর পাখীদুটো, তেমনি সুন্দর তাদের
বাসা বাঁধার কৌশল।
আমি রোজ প্রাণভরে পাখীদুটোকে দেখতাম।

বাসা হল, ডিম হল
তা থেকে ছোট্ট ছোট্ট তিনটে বাচ্চা হল,
দেখতাম কি যত্ন সহকারে,
পাখীদুটো বাচ্চাগুলোকে খাওয়াছে,
আগলাচ্ছে, আদর করছে।
বাচ্চাদুটোর সবসময় কিচির মিচির শব্দ,
সকাল হলেই খাওয়ার জন্য চীৎকার
মা বাবার নিরন্তর খাওয়ার যোগান দেওয়া।

আস্তে আস্তে বাচ্চাদুটো বড় হল,
চামড়া ফুটে গায়ে নীল পালক এল,
ধীরে ধীরে ডানা ঝাপটানো শিখল।
মাঝে মধ্যেই বাসার কিনারায় আসত
আবার ফুড়ুৎ করে ঢুকে যেত।
বুঝতে পারতাম বাচ্চাদের ডানা শক্ত হচ্ছে,
এবার ঘর ছাড়বে।

সেদিন বাড়ী ফিরে দেখি,
বাচ্চাদুটো নেই ,উড়ে গেছে।
পাখীদুটো বাসার কাছে বসে আছে,
শূন্য নয়নে বাসাটাকে দেখছে।
হঠাৎ পাখীদুটোর সাথে নিজেকে গুলিয়ে ফেলল্যাম,
আমারও তো বাসা,সন্তান আছে,
ডানা শক্ত হচ্ছে, এবার উড়ে যাবে।
যেমন আমি গিয়েছিলাম,
বহু বছর আগে।