ভিটের টান
বহুবছর আগে, একেবারে ছোটবেলায় নবদ্বীপের এক ছোট পাড়ার শান্তজীবন ছেড়ে বাবা মার হাত ধরে চলে এসেছিলাম শহর কলকাতার ব্যস্ত জীবনে। তারপর মাঝে মাঝে পৈতৃক ভিটেতে দু একদিনের জন্য যাওয়া আর কি, এক অনাবিল আনন্দ, ভালো লাগা। কেটে গেছে বহুবছর, এখন অবসরপ্রাপ্ত বরিষ্ঠ নাগরিক। কিছুদিন আগে বন্ধুদের সাথে মায়াপুরে গিয়ে নৌকাবিহারে হঠাৎ চোখ পড়ে যায় গঙ্গার ওপারে নবদ্বীপ ধাম লেখাটির ওপর। বুকের মধ্যে কেমন একটা টনটন করে ওঠে, এক অদ্ভুত অনুভূতি। মনে হচ্ছিলো যাই ছুটে চলে, যাওয়া হয় নি। তারপর বারবার মনে হয়েছে, কেন এই এই অনুভূতি, কেন এই টান। এটাই বোধহয় মাটির ঘ্রাণের গন্ধ, ভিটের টান, নিজের জন্মস্থানে ফিরে যাবার অন্তরের এক প্রবল আকুতি।
বহু বছর আগে এক তীব্র ঝড়ে
বিরাট গাছটা মূলসহ গিয়েছিল উপড়ে
কিছু ছোটখাট শিকড় মাটির সাথে আছে লেগে
তাই গাছটা আজও আছে বেঁচে যায়নি মরে
হয়ত আপ্রাণ চেষ্টা করে সোজা হয়ে দাঁড়াবার
নিজের ভিটেতে আবার ফিরে যাবার।
জীবনের সাথে তার মিল যে বড়
রূজির টানে কত জীবন ভিটেছাড়া হয়ে
সমূলে উপড়ে গেছে, রয়েছে অন্যত্র বাস্তুহারা হয়ে
অবচেতন মনের শিকড় এখনও প্রোথিত নিজের গ্রামে
বহুযুগ কেটে গেল হয়ে ভিটেছাড়া
খালি বলে ফিরে যাব, ফিরে যাব মাটির টানে।
কেউ বা ফিরতে পারে, কেউ পারে না
ঝড়ের যাওয়া আসাও থাকে না থেমে
চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কচি কিশলয়
চোখে তাদেরও স্বপ্ন মহীরূহ হবার
হয়ত তারাও মহীরূহ হয়ে ঝড়ে ধরাশয়ী হবে
কি লাভ তাতে, থেকো ভিটেতে বুনোঝোপ হয়ে।